কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায়

কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায় আলোচলা করা হলো।শরীরের ব্যথা ছোট হোক বা বড়, যে স্থানে হোক না কেন ভুক্তভোগী হতে হয় আপনাকেই ।তাই শরীরের কোন ব্যথাকেই ছোট করে দেখা যাবে না। অনেকেই আছেন যারা ফ্রোজেন সোল্ডার বা কাঁধে ব্যথায় অনেকদিন যাবত ভুগতে থাকেন। তখন বোঝার উপায় থাকে না কি করলে ব্যথা একটু কমবে। ব্যথা তীব্র হলে বা দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা নিয়ে বসে থাকলে সোল্ডার বা কাঁধ ফ্রোজেন হয়ে যেতে পারে।কাঁধে ব্যথা বা ফ্রোজেন সোল্ডার কি জানবেন কিভাবে?
কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায়
শরীরের কোথাও ব্যথা লাগলে সেটাকে তুচ্ছ করে না দেখাই ভালো। ব্যথা অল্প থাকা অবস্থায় এর চিকিৎসা করা উচিত। কাঁধে ব্যথা বা সোল্ডার ফ্রোজেন হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। এবং কাঁধ ফ্রোজেন হলে এর লক্ষণ গুলো কিভাবে বুঝতে পারবেন তা জানতে হলে এই পোস্টটি মনযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভূমিকা

বর্তমানে আমরা বেশির ভাগ সময়ই কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করি।দীর্ঘসময় ধরে কাজ করার জন্য কাঁধে ব্যাথা হতে পারে। ব্যাথার সময় হাত বিশ্রামে থাকলে বা কোন কাজ না করলে সাধারণত ব্যথা কম অনুভূত হয়। কিন্তু হাত দিয়ে কোন কাজ করতে গেলে বা কোন কিছু ধরতে গেলে কাঁধে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের এ ব্যথা বেশি হয়। ভারী কাজ করার সময় বা অন্য কোন কারণে কাঁধে আঘাত পেলে আস্তে আস্তে কাঁধ জমে যেতে থাকে।

অনেক সময় প্রথম দিকে এই ব্যথা অনুভব করা যায় না কিন্তু ধীরে ধীরে এই ব্যথা তীব্র হতে থাকে। এবং কাঁধ ফ্রোজেন হতে থাকে। এ সময় রোগীর পিছনের দিকে হাত নিতে পারেন না । এমন কি চুল আঁচড়ানো যায় না। অনেক সময় জামাকাপড় পরতেও ভীষণ কষ্ট হয় ।কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায় দেওয়া হলো।

কাঁধে ব্যথা বা ফ্রোজেন সোল্ডার কি

কাঁধে ব্যথা বা ফ্রোজেন সোল্ডার কি? কাঁধে ব্যথা এক ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। কোন কারণে কাঁধে ব্যাথা তীব্র হলে দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।কাঁধে ব্যথার জন্য অনেক সময় ঘাড়ের উপরে হাত তুলতে পারা যায় না। এবং কাঁধ নাড়াতে অনেক কষ্ট হয়। শরীরের পেশি অনেক সময় অসহ্য ব্যথার কারণে শক্ত হয়ে যায়।কাঁধের ব্যথা ফ্রোজেন সোল্ডার হিসেবেও পরিচিত।

আরও পড়ুনঃকোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

কাঁধে ব্যাথার কারন

বিভিন্ন কারনে কাঁধে ব্যথা হতে পারে। যেমনঃ
  • আঘাত জনিত কারণে কাঁধে ব্যথা হতে পারে।
  • কোন ভারী জিনিস তোলার সময় মাংসপেশী ও লিগামেন্টস ইনজুরি হতে পারে।
  • ব্যায়াম করার সময় অতিরিক্ত চাপের কারণে মাংসপেশী ও লিগামেন্টস ইনজুরি হতে পারে।
  • ক্রিকেট খেলার সময় অতিরিক্ত জোরে যারা বল করে তাদের ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে
  • ডান কাঁধে ব্যথার কারণঃ-
  • ডান কাঁধে ব্যথার জন্য অনেকগুলি ভিন্ন কারণ হতে পারে। ডান কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথা প্রায় পেশী,টেন্ডন বা লিগামেন্টের ক্ষতির কারণে বা সে জায়গাগুলির পেরিফেরাল স্নায়ুর ক্ষতির কারণে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণও হতে পারে।
  • এসব কারন দেখা দিলে কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।

কাঁধে ব্যথার ব্যায়াম

কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে ব্যায়াম অন্যতম।ঘরের কাজে কিংবা অফিসের কাজে আমাদেরকে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশেষ করে একটানা কাজ করতে গেলে কাঁধে ব্যথা অনুভব হয়। এ ধরনের ব্যথা থেকে উপশম পেতে কাঁধের মাংসপেশীর কিছু ব্যায়াম করতে পারেন সহজেই। কয়েকটি ব্যায়ামের মাধ্যমে সহজে কাঁধের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়।
  • মাটির সমান্তরাল করে হাত দুটি উপরে তুলুন। এর সাথে সাথে আপনার কাঁধ নিচের দিকে ঠেলতে থাকুন এবং পেছনের দিকে প্রসারিত করুন। এরপর হাত দুটি সোজা রাখুন এবং মাথার উপরে তুলুন। আপনার কাঁধ ভিতরের দিকে চেপে কনুই সোজা করুন। এবার মনে মনে দশ পর্যন্ত গুনতে থাকুন। গোনা শেষ হলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।
  • আপনার শরীরের ওজন আপনার দুই পায়ের উপর সমানভাবে ভাগ করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এরপর নিতম্ব এবং দুই কাজ একসঙ্গে চেপে ধরুন, দেহের সম্পূর্ণ ওজন এক পায়ে স্থানান্তরিত করুন এবং অন্য পা হাঁটু থেকে উপরে তুলুন। এই সময় উরু যেন মাটির সমান্তরাল বরাবর থাকে। এবার এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনুন। গোনা শেষ হলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন। একই পদ্ধতিতে অন্য পা দিয়ে ব্যায়ামটি করুন।
  • একটি চেয়ার নিন। চেয়ারে বসার সময় একটু সামনের দিকে এগিয়ে এসে বসুন। শরীরের উর্ধাঙ্গ কিছুটা ডানদিকে সরান। এমন অবস্থায় নিজের কাজ কিছুটা ভেতরের দিকে চাপুন এবং মনে মনে পাঁচ পর্যন্ত গুনুন।, গুনা শেষ হলে পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসুন। এবার বাঁ দিকেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করুন। কিন্তু এর মধ্যে অবশ্যই নিজের হাটু কোনভাবেই নড়াবেন না।এটি কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে ভালো কাজ করে।

কাঁধে ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়

বর্তমানে আমরা বেশির ভাগ সময়ই কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করি।দীর্ঘসময় ধরে একই দিকে কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার জন্য কাঁধে ব্যাথা হওয়াটা স্বাভাবিক ।কাঁধে ব্যাথার সমস্যা একবার শুরু হলে সে ব্যাথা সহজে ভালো হতে চায়না।এই অবস্থায় যেকোনো কাজ করাও কষ্ট হয়ে যায়।তবে কিছু ঘরোয়া উপায় জানা থাকলে ব্যাথা থেকে অনেকটা আরাম পাওয়া যায়।চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁধের ব্যাথা দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায়-

  • আইস থেরাপি দিন-
কাঁধে ব্যথা দূর করার জন্য আইস থেরাপি একটি কার্যকরী উপায়।আইস থেরাপির মাধ্যমে কাঁধের ব্যথা খুব দ্রুত এবং সহজেই কমে যেতে পারে। ব্যাথা দূর করার জন্য আইস থেরাপি অনেক বেশি উপকারি।জয়েন্ট ও পেশি ব্যাথা উভয় ক্ষেত্রেই আইস থেরাপি বেশি কার্যকারী।তবে এক্ষেত্রে সরাসরি বরফ দেওয়া যাবেনা।বরফের ছোট ছোট টুকরো নিয়ে একটি পরিস্কার কাপড়ে মুড়িয়ে ব্যাথার স্থানে ১৫-২০ মিনিট ধরে রাখুন।এতে অনেকটাই ব্যাথা কমে যাবে। আইস থেরাপি কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে ভালো কাজ করে।

  • গরম সেঁক দিন-
অল্প ব্যাথার ক্ষেত্রে আইস থেরাপি বেশি কার্যকর।কিন্তু ব্যাথা যদি বেশি হয় বা অনেক দিনের হয় তাহলে আইস থেরাপির পরিবর্তে গরম সেঁক দিন।আগুনে কাপড় গরম করে সেঁক দিতে পারেন বা পানি গরম করে তাতে কাপড় ভিজিয়ে ব্যাথার স্থানে সেঁক দিতে পারেন।এতে ব্যাথার স্থানে রক্তপ্রবাহ বাড়ে ফলে ব্যাথা দ্রুত কমে যায়।

  • লবন পানিতে গোসল করুন
ব্যাথা কমানোর আরেকটি সহজ উপায় হলো লবন পানিতে গোসল করা। কাঁধের ব্যাথা কমাতে এটি একটি কার্যকরী উপায়।কেননা লবন পানিতে গোসল করলে পেশির ব্যাথা অনেকটায় কমে যায়।বিশেষজ্ঞদের মতে লবন পানিতে গোসল করলে শরীরে রক্ত চলাচল অনেকাংশে বেড়ে যায়।আর এই কারনের ব্যাথা কমে যায় খুব দ্রুত।প্রায় আধাঘন্টা সময় নিয়ে আপনি লবন পানিতে গোসল করতে পারেন,এতে ব্যাথা তাড়াতাড়ি কমে যাবে।লবন পানি কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে ভালো কাজ করে।

কাঁধে ব্যাথার চিকিৎসা

এই রোগের চিকিৎসার জন্য কোনো ধরনের অপারেশনের প্রয়োজন হয়না।কিন্তু রোগিকে আশ্বস্ত করতে হবে এটি সাধারন একটি সমস্যা। কাঁধে ব্যাথার জন্য প্রথমে কিছু হালকা ব্যাথানাশক দেওয়া হয়।এর পাশাপাশি সঠিক কিছু ব্যায়াম করলে ফ্রোজেন সোল্ডার বা কাঁধ ব্যাথা ভালো হয়ে যায়।তবে কিছুটা সময় লাগে।

কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে ব্যাথানাশক বা ব্যায়াম করার পরেও যদি ব্যাথা না কমে তবে অর্থোপেডিক চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে কাঁধের অস্থিসন্ধিতে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হতে পারে।এতে ফ্রোজেন সোল্ডার বা কাঁধের ব্যাথা কমতে থাকে।তবে ইনজেকশক দিলেও নিয়মিত ব্যায়াম করতে থাকুন।কেননা কাঁধের ব্যাথায় ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নাই।

লেখকের মন্তব্য

কাঁধে ব্যথা এক ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। কোন কারণে কাঁধে ব্যাথা তীব্র হলে দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।তবে ব্যাথা পাওয়ার সাথে সাথে যদি ম্যাসাজ করা হয় বা বিভিন্ন রকম থেরাপি দেওয়া হয় তাহলে ব্যাথা থেকে অনেকটা আড়াম পাওয়া যায়। তবে কাঁধের ব্যাথা কমাতে ব্যায়াম অনেক কার্যকারী উপায়।এর সাথে কাঁধে ব্যথা দূর করার উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।

এই পোস্টটি যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে পোস্টটি আপনার বন্ধু বান্ধব ও আত্বীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন যেনো এই পোস্টটি পরে উনারাও উপকৃত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর এস জান্নাত এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url