কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জেনে নিন এই পোস্টের মাধ্যমে। যারা সারাদিন চেয়ারে ঝুঁকে বসে কাজ করেন তাদের পেটের মাংসপেশী ও পায়ের সামনের মাংসপেশি সংকুচিত হয়। আর এরকম সংকুচিত থাকার জন্য একটা পর্যায়ে মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এবং কোমর ও পিঠের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যায়। এজন্য তারা দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথায় ভোগেন। এছাড়াও কোমর ব্যথা কিসের লক্ষন তা আলোচনা করা হলো।
আপনি যদি দীর্ঘ মেয়াদী কোমর ব্যথায় ভোগেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কোমর ব্যথা কেন হয়? কোমর ব্যথা কিসের লক্ষন?ও কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়জানার জন্য পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পুরোটি পড়বেন।আশা করছি এ পোষ্টের মাধ্যমে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
অনেকক্ষণ যাবত বসে থেকে কাজ করার সময় হঠাৎ হঠাৎ কোমর ব্যথায় কাতর হন অনেকেই। বর্তমানে কোমর ব্যথার সমস্যা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যেই এ সমস্যাটি দেখা দেয়। এর একটি বড় কারণ হলো, এখন বেশিরভাগ কাজই সারাদিন ঘরে বসে বা অফিসে বসে করতে হয়। যারা অনলাইনে কাজ করি তাদের তো দিনের বেশিরভাগ সময় বসে থেকেই কাজ করতে হয়।
কম্পিউটারের সামনে একবার কোন কাজ নিয়ে বসলে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়।শুধু তাই নয় শরীর চর্চার অভাবেও আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের ব্যাথা অনুভূত হয়। কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চললে আমরা কোমর ব্যথা থেকে রক্ষা পেতে পারি। আসুন জেনে নেয়া যাক কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে।
কোমরের ব্যথা কেন হয়
কোমর ব্যথার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো কর্মস্থলে সঠিকভাবে বসে কাজ না করা। এর আরেকটি কারণ হলো চেয়ারের কাঠামো গত ত্রুটি। দীর্ঘ সময় ধরে বসে টানা কাজ করলে আমাদের মেরুদন্ডের সামনের দিকের মাংসপেশি সংকুচিত হয় এবং পেছনের দিকের মাংসপেশি প্রসারিত হয় এজন্য শরীরের পেশির ভারসাম্যতা নষ্ট হয়। এর সময় মেরুদন্ডের মাঝখানের অংশে অর্থাৎ ডিস্কের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। আর এখান থেকে ধীরে ধীরে ব্যাথার সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও একটানা বসে থেকে কাজ করার কারণে অনেকের পিঠ ও ঘাড় ব্যথা হতে পারে।
মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ
কিছু সাধারন সমস্যাগুলোর মধ্যেও কোমর ব্যথা মহিলাদের একটি সমস্যা। বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে ।তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা হালকা হয় এবং সহজেই নিরাময় করা যায়।আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাথা তীব্র হতে পারে যা সহজে নিরাময় করা যায় না। বিভিন্ন কারণে মহিলাদের কোমর ব্যথা হতে পারে। নিম্নে মহিলাদের কোমর ব্যাথার কারণ গুলো দেওয়া হলোঃ
- মহিলাদের পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথা দেখা দিতে পারে কারণ এ সময় জরায়ু সংকুচিত হয়ে যায়। জরায় সংকুচিত হওয়ার কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে।
- ভারী কোন জিনিস তোলার কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে।
- গর্ভাবস্থার সময় শরীরের ওজন অনেকটা বেড়ে যায় এবং শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে যার ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে।
- ওজন কমানোর জন্য বা শরীরচর্চার জন্য যারা ব্যায়াম করেন ।তাদের অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে পেশীতে টান লাগতে পারে এবং সেজন্য কোমর ব্যথা হতে পারে।
- মানসিক চাপের কারণে শরীরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। যার জন্য কোমর ব্যথা হতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর ভাবে জীবন যাপন করলে বা খাবার দাবারের অনিয়ম করলে এবং নিয়মমতো শরীরচর্চা না করলে কোমর ব্যথা হতে পারে।
- তাছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে যেমন কিডনি পাথর ইউটিআই , অ্যান্ডোমেট্রিওসিস এবং ফাইব্রমিয়ালজিয়ার মত অন্যান্য কারণে কোমর ব্যাথা হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ
- গর্ভাবস্থায় মহিলাদের ওজন অনেক গুণ বেড়ে যায় এবং শরীরের হরমোনের পরিবর্তন ঘটে যার ফলে কোমর ব্যথা হয় । গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা দূর করতে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন সঠিকভাবে হাঁটাচলা করা,ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ রাখা ,সঠিক ভাবে ঘুমানো, এবং চিকিৎসকের পরামর্শে শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করা।
- এসব কারন দেখা দিলে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।
কোমর ব্যথার লক্ষন
কোমর ব্যথার লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে
- ব্যথা তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে ।এটি ঝাপুনি যুক্ত তীক্ষ্ণ বা জ্বলন্ত হতে পারে।
- কোমর ব্যাথার আরো একটি অন্যতম লক্ষণ হলো কোমর বা নিতম্ব শক্ত হয়ে যেতে পারে।
- কোমর ব্যথা হলে অস্বস্তি বোধ হবে কোমর পা অথবা নিতম্ব অস্বস্তি হতে পারে।
- কোমর ব্যাথা হলে চলাচল করার অসুবিধা হবে। কোমর ব্যথা হলে হাটাহাটি করা , চলাফেরা করা , বা বসে থেকে দাঁড়ানো এগুলো কঠিন হয়ে যাবে।
- এসব লক্ষন দেখা দিলে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।
কোমর ব্যথা কিসের লক্ষন
কোমর ব্যথা কিসের লক্ষন তা আলোচনা করা হলো।বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যাথা হতে পারে। ঘন ঘন কোমরে ব্যাথা হলে খুব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ কিডনি রোগ,অস্টিওপোরোসিস রোগের জন্য কোমর ব্যথা হতে পারে। রোগভেদে কোমর ব্যথায় তীব্রতা কমবেশি হতে পারে। কোমর ব্যথা মানে যে বড় কোন রোগ এমনটি ভাবারো কোনো কারণ নেই।
তবে অস্টিওপোরোসিস এর রোগটির জন্যও অনেক সময় কোমর ব্যথার তীব্র হতে পারে। অস্টিওপোরোসিস হাড়ের একটি বিশেষ রোগ। তবে এই রোগে পুরুষের তুলনায় নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে আগে থেকে এই রোগের লক্ষণ জানা থাকলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে সাবধান হওয়া জরুরী।
আরও পড়ুনঃকাঁধে ব্যথা দূর করার উপায়
কোমরের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
কোমরের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।জেনে নিন কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে কোমর ব্যথা কমাবেনঃ
- কোমর ব্যথা কমানোর জন্য বিশ্রাম নেয়াটা জরুরী। কোমর ব্যথার সময় যদি বিশ্রাম নেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা তাড়াতাড়ি কমে যেতে পারে।
- কোমর ব্যথা হলে মেসেজ করতে থাকুন। মেসেজ করার ফলে আপনার ব্যথা জনিত স্থানে ব্যথা কমে যাবে।
- নিয়মিত এক্সারসাইজ করার মাধ্যমে কোমর ব্যথা কমানো সম্ভব ।কেননা কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে শরীরচর্চা বা এক্সারসাইজের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম নিয়ম মেনে যদি করা যায় তাহলে কোমর ব্যথা ও পিঠ ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয় ।আগে আপনাকে জানতে হবে আপনার ব্যথাটা কি ধরনের। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে পারেন এবং সে অনুযায়ী ব্যায়াম করতে পারেন।
- কোমর ব্যথায় হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করুন এতে ঘরোয়া উপায় হিসেবে এটি আপনাকে অনেক আরাম দিবে। কোমরের ব্যথা দেখা দিলে হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করুন তবে এর আগে কোমরে সরিষার তেল দিয়ে মেসেজ করে নিন এতে যন্ত্রণা অনেকটাই কমে যাবে।
- সুস্থ ভাবে জীবন যাপনের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই জরুরী। আপনি যদি নিয়মিত কোমর ব্যথায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই আপনার ওজনের দিকে খেয়াল করুন। এমনও হতে পারে বাড়তি ওজনের জন্যই আপনার কোমর ব্যথা হচ্ছে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি ঘুম ও শরীরচর্চার দিকে লক্ষ্য রাখুন।
কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট
কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় ট্যাবলেট সেবন করা।কোমর ব্যথা বা লো ব্যাক পেইন খুবই মারাত্মক একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি ১৫ থেকে ১০০ বছর বয়সী প্রায় ৯০% মানুষ এর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। কোমর ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ট্যাবলেট সাজেস্ট করা হয়। এগুলো খেলে কোমর ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেই কোমর ব্যথা কমানোর কিছু ট্যাবলেট এর নামঃ
- Anaflex max 375
- Myorel
- Napadol
- Naparox (500mg)
- Napro (500mg)
- Eclrss (500mg)
- Sonap (500mg)
- Diproxen (500mg)
- Napryn (500mg)
কোমর ব্যাথার ওষুধ
বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে .তবে মনে প্রশ্ন থাকতেই পারে স্বাভাবিকভাবে এত ওষুধের মাঝে কোন ওষুধ ভালো । কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হিসেবে এগুলো ব্যাবহার করা হয়। তবে চলুন জেনে নেই সব থেকে ভালো ওষুধের নামঃ
- আইবুপ্রোফেন
- ন্যপ্রস্কেন সোডিয়াম
লেখকের মন্তব্য
বিভিন্ন অনিয়মের কারনে কোমর ব্যাথা হতে পারে। তাই আমাদের জীবনযাপন নিয়মের মধ্যে রাখা উত্তম। নিয়মিত শরীরচর্চা ,স্বাস্থসম্মত খাদ্যাভ্যাস আমাদের জীবনকে সুন্দর করবে এবং শরীরকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।এছাড়াও কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।
এই পোস্টটি যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে পোস্টটি আপনার বন্ধু বান্ধব ও আত্বীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন যেনো এই পোস্টটি পরে উনারাও উপকৃত হতে পারে।
আর এস জান্নাত এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url