পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায়

পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই পোস্টে।পিসিওএস একটি হরমোন জনিত সমস্যা।সাধারনত মহিলাদের এই সমস্যা ব্যাপক হারে দেখা যায়।পিসিওএস হলে মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যার পাশাপাশি অনেক সমস্যা দেখা যায়। পিসিওএস এর লক্ষন গুলো কি কি এবং এর কারনগুলো উল্লেখ করা হলো।
পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায়
প্রিয় পাঠক ,আপনি পিসিওএস এর সমস্যায় ভুগছেন কিনা তা জানা বা বোঝার জন্য এই পোস্টটি পুরোটা মনোযোগ সহকারে পড়ুন।এই পোস্টির মাধ্যামে আপনি জানতে পারবেন পিসিওএস হওয়ার কারন।পিসিওএস এর লক্ষন গুলো কি কি ও পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায়।

পিসিওএস কি

পিসিওএস একটি হরমোন জনিত সমস্যা।মহিলাদের মধ্যে পুরুষ হরমোন বা আন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে পিসিওএস এর সমস্যা দেখা দেয়।বর্ত্মান বিশ্বের নারীরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাগুলোতে ভোগেন তার অন্যতম সমস্যা হলো পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস রোগে।বিভিন্ন গবেষনয় দেখা গেছে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্য ১ জন নারী পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত।

নারীর প্রজনন হরমোনের তারতম্যে ঘটলে এই সমস্যা দেখা দেয়।তবে পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায় অনেক রয়েছে।পিসিওএস এর লক্ষন গুলো কি কি দেখা মাত্রই এর থেকে মুক্তির উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।

পিসিওএস এর কারন

পিসিওএস এর কারন হিসেবে ইনসুলিন প্রতিরোধ,জিন,এবং প্রদাহকে বোঝানো হয়।এগুলো এইরোগের প্রাথমিক কারন হিসেবে ধরা হয়।

ইনসুলিন প্রতিরোধঃশরীরের কোষ গুলি যখন সঠিকভাবে ইনসুলিন প্রতিরোধ করতে পারে না তখন পিসিওএস এর সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত পিসিওএস এ আক্রান্ত ৭০ শতাংশ মহিলারা ইনসুলিন প্রতিরোধ প্রদর্শন করেন।

জিনঃপিসিওএস রোগ একটি জিনগতো সমস্যা।সাধারনত পরিবারের কোনো সদস্যদের মধ্যে এই সমস্যা থাকলে অন্যাদেরও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রদাহঃপিসিওএস এ আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে সাধারনত উচ্চ স্তরের প্রদাহ দেখা যায়।

পিসিওএস এর লক্ষন গুলো কি কি

বেশিরভাগ মহিলাদের প্রথম পিরিয়ডের সময় থেকেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।কিন্তু সাধারনত পরবর্তীতে মেয়েদের ওজন বেড়ে গেলে বা বিবাহিত মেয়েদের গর্ভধারনে বাধা আসলে এই সমস্যা নির্নয় করা হয়।পিসিওএস এর লক্ষন গুলো কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পিসিওএস এর উপসর্গের মধ্যে সাধারন কিছু উপসর্গ হলো-
  • অনিয়মিত পিরিয়ড
  • অবাঞ্চিত চুল গজান
  • ভারী রক্তপাত
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি
  • আগের তুননায় ত্বক কালো হয়ে যাওয়া
  • চুল পড়ে যাওয়া
  • উদ্বেগ বা বিষন্নতা
  • ব্রন
অনিয়মিত পিরিয়ডঃ পিসিওএস এর লক্ষনগুলোর মধ্যে অন্যাতম লক্ষন হলো ,অনিয়মিত পিরিয়ড।কোনো নারী পিসিওএস এ আক্রান্ত হলে তার পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়। এই সমস্যায় আক্রান্ত মহিলাদের পিরিয়ড সার্কেল দীর্ঘ হয়ে থাকে।অনেক সময় ২-৩ মাসের সার্কেলে পিরিয়ড হয়।এমন অবস্থা দেখা দিলে অবশ্যই একজন গাইনী বিশেষজ্ঞর পরামর্শ গ্রহন করতে হবে।এবং পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।

অবাঞ্চিত চুল গজানোঃপিসিওএসের আরো একটি প্রধান লক্ষন হলো অবাঞ্চিত চুল বা লোম গজানো।এই অবস্থায় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন,মুখ,পেট,পিঠ,বুক ইত্যাদি জায়গায় চুল গজাইয়।এই অতিরিক্ত চুল গজানোকে হিরসুটিজম বলা হয়।

ভারী রক্তপাতঃপিসিওএস এ আক্রান্ত হলে দীর্ঘ সময় নিয়ে জরায়ুর আস্তরন জমে যায়।এই অবস্থায় পিরিয়ড হলে তা সাধারনের চেয়ে ভাড়ী রক্তপাত হয়ে থাকে।

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধিঃপিসিওস হলে মহিলাদের অতিদ্রুত ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকে। সাধারনত প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলাদের ওজন বেড়ে যায় ।এক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।

আগের তুননায় ত্বক কালো হয়ে যাওয়াঃপিসিওএস এ আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন স্থান আগের তুলনায় বেশি কালো হয়ে যায়।ঘাড়,ও স্তনের নিচে কালো দাগ বেশি লক্ষ্য করা যায়।
চুল পড়ে যাওয়াঃএই রোগে আক্রান্ত মহিলাদের খুব দ্রুত চুল পড়ে যেতে থাকে।পিসিওএস রোগের আরও একটি প্রধান লক্ষণ হল চুল পড়ে যাওয়া।

উদ্বেগ বা বিষন্নতাঃপিসিওএস রোগে আক্রান্ত মহিলারা বেশিরভাগ সময় উদ্বেগ বা বিষন্নতায় ভুগে থাকেন।

ব্রনঃপিসিওএসের জন্য মহলাদের শরীরে পুরুষ হরমোন বেশি থাকে।এই হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে ত্বককে বেশি তেলভাব সৃষ্টি করে যার জন্য মুখ, পেট,বুক ও পিঠের উপরের অংশে ব্রন সৃষ্টি হয়।এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।

আরও পড়ুনঃহিট স্ট্রোক কি? এর কারন, লক্ষন ও প্রতিকার

পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায়

  • পিসিওএস এর লক্ষন গুলো দেখামাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করা উচিৎ।নিচে পিসিওএস এর চিকিৎসা পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায় গুলো আলোচনা করা হলো।
  • পিসিওএস থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে সবসময় স্ট্রোং থাকতে হবে। নিয়মিত হাটাহাটি বা ব্যায়াম করতে হবে। নিজেকে সুন্দর জীবনচক্রে নিয়ে আসুন।
  • পিসিওএস রুগিদের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনক জরুরি।নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করতে হবে।খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে সুষম খাবার, সবজি,বাদাম,ফল,বিভিন্ন শস্যদানা এবং বিন খেতে পারেন।এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার ত্যাগ করতে হবে।অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার,মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা।
  • পিসিওএস থেকে মুক্তি পেতে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন।অতিরিক্ত ওজন পিসিওসের অন্যতম একটি কারন। ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত হেলদি ডায়েটের পাশাপাশি শরীরচর্জা করুন।

পিসিওএস এর চিকিৎসা

জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়িঃএই বড়িগুলো শরীরে আন্ড্রোজেন উৎপাদন কমায়।অতিরিক্ত লোমের বৃদ্ধি কমাতে এই বড়িগুলো সাহায্য করে।

প্রোজেস্টিন থেরাপিঃএই থেরাপি প্রতি এক থেকে দুই মাসে ১০ থেকে ১৪ দিনের জন্য নিলে পিরিয়ড নিয়মিত হতে পারে এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

লেটরোজোলঃস্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় লেট্রোজোলের পরামর্শ দেওয়া হয়।

মেটফর্মিনঃএটি ডায়াবেটিসের অগ্রগতি কমিয়ে দেয় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ক্লোমিফেনঃএটি একধরনের এন্ট্রি-ইস্ট্রোজেন ওষুধ।এটি পিরিয়ডের প্রথমদিকে দেওয়া হয়।

গোনোডোট্রপিন্সঃএটি একটি হরমনজনীত ওষুধ।এটি ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

লেখকের মন্তব্য

পিসিওএস একটি হরমোন জনিত সমস্যা।মহিলাদের মধ্যে পুরুষ হরমোন বা আন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে পিসিওএস এর সমস্যা দেখা দেয়।বর্তমান বিশ্বের নারীরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাগুলোতে ভোগেন তার অন্যতম সমস্যা হলো পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস রোগে। তবে এটা থেকে মুক্তি পেতে হলে পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।

প্রিয় পাঠক,এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে পোস্টটি আপনার বন্ধু বান্ধব ও আত্বীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন,যেনো এই পোস্টটি পড়ে উনারাও উপকৃত হতে পারেন।ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর এস জান্নাত এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url